রাজশাহী অফিস : গণপিটুনিতে আহত আব্দুল্লাহ আল মাসুদ থানার মেঝেতে পড়ে পানি জন্য আকুতি জানিয়ে তার সামনে থাকা এক যুবকে উদ্দেশ্য করে বলছিলেন, ‘বাসায় আমার ৪ দিনের বাচ্ছা আছে। আমিতো অনেকদিন আগে থেকেই ছাত্রলীগ বাদ দিয়েছি। আমাকে একটু পানি খাওয়ান ভাই।’ শনিবার (৮ সেপ্টেম্বর) রাতের এই ঘটনার সময় তার আশপাশে একাধিক উৎসুক মানুষ দাঁড়িয়ে ছবি তুললেও তাদের কাউকেই পানি তুলে দিতে দেখা যায়নি। এর পর তাকে সেনা পাহাড়ায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ৩১ নং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। চিকিৎসকের দেয়া তথ্য মতে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তার মৃত্যু হয়।
এই ঘটনার পর ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান একাধিক নেতা তাদের ফেসবুকে মাসুদের করুণ মৃত্যুর ঘটনা তুলে ধরে পোস্ট দেন। তবে এই ঘটনায় রবিবার বিকাল পর্যন্ত কোন মামলা হয়নি।
এর আগে শনিবার সন্ধ্যার পর নগরীর বিনোদপুর বাজার এলাকা থেকে আব্দুল্লাহ আল মাসুদকে দেখতে পেয়ে একদল যুবক গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ওপর হামলাকারী হিসেব চিহ্নত করে এবং পেটাতে শুরু করে। পরে তারা মাসুদকে মতিহার থানায় নিয়ে যায় হত্যকারী হিসেবে মামলা দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিতে। সেখানে পুলিশ তাকে নিরাপত্তা না দিয়ে বোয়ালিয়া থানায় নিয়ে যাবার পরামর্শ দেয়। থানা থেকে জানানো হয় ৫ আগস্ট বোয়ালিয়া থানা এলাকায় ছাত্র-জনতার ওপর হামলা হয়েছিল কাজেই ওই থানাতে মামলা দিতে হবে। কথা মতো মাসুদকে ক্ষিপ্ত তরুণরা বোয়ালিয়া থানায় নিয়ে যায়। সেখানে তারা মাসুদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দিতে চায়। তবে থানায় মাসুদের অবস্থর অবনতি হলে তাকে সেনা পাহাড়ায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।
এদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সূত্রের দেয়া তথ্য মতে, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে রাবিতে ছাত্রলীগের একাধিপত্য বৃদ্ধি পায়। ২০১৪ সালের দিকে মাসুদ রাবি শাখা ছাত্রলীগের সহ সম্পাদক। এসময় রাবির হলগুলোতে শিবিরের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা ও নির্যাতন চালানো হয়। রাবি ছাত্রলীগের রানা ও তুহিনের নেতৃত্বে টগর ও মাসুদ রাবিতে তাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে। এসময় শিবিরের মাদারবক্স হলের তৎকালীন সেকরেটারি ওয়ালিউল্লাকে একটি রুমে আটকে রেখে অমানসিক নির্যাতন চালানো হয় এবং তার হাত ও পা ভাঙ্গে দেয়া হয়। বেছে বেছে বিভিন্ন হল থেকে শিবিরের নেতাকর্মীদের নির্যাতন ও হত্যা করা হয়। ওই সময় থেকে তুহিন ও মাসুদ রাবিতে পরিচিত। তত্বাবধায়ক সরকার পরবর্তি সময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিবিরের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা ও হত্যারও অভিযোগ ছিল সাবেক এই ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে। অন্যান্য ছাত্রলীগ নেতার মতো মাসুদও ছিলেন এসব মামলার অন্যতম আসামি।
তবে ২০১৪ সালের ২৯ এপ্রিল ছাত্র অবস্থায় রাবিতে সকালে ক্লাসে যাবার পথে রাবির জিয়া হলের সামনে হামলার শিকার হন আব্দুল্লাহ আল মাসুদ। এতে মাসুদের ডান পায়ের নিচের অংশ গোড়ালি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাঁ পা। ওই ঘটনার পর থেকে তিনি পঙ্গু জীবনযাপন করছিলেন তিনি। ২০২৩ সালে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের নির্দেশে সেকশন অফিসার সমমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে স্টোর অফিসার পদে তাকে নিয়োগ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গত ৩ সেপ্টম্বর মাসুদ কন্যা সন্তানের জনক হন।
বোয়ালিয়া থানার ওসি মাসুদ পারভেজ বলেন, মাসুদের ওপর হামলা হয়েছে নগরীর মতিহার থানা এলাকায়। নিয়ম অনুসারে মামলা ওই থানাতেই হবে। তবে এবিষয়ে মতিহার থানার ওসিকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এদিকে আরএমপির কমিশনার আবু সুফিয়ান বলেন, থানায় বলে দেয়া হয়েছে এই ঘটনায় কোন মালা দিতে আসলে তা যেন নেয়া হয়। যে কোন হত্যাকান্ড সহ বিশৃঙ্খলাকে আমরা প্রশয় দিব না।